Home » পুলিশ সংস্কার কমিশন নিয়ে নাগরিকদের ক্ষোভ ও সমালোচনা

পুলিশ সংস্কার কমিশন নিয়ে নাগরিকদের ক্ষোভ ও সমালোচনা

police news

পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও কার্যক্রম নিয়ে বিশিষ্ট নাগরিকদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভা। এ সভায় সমালোচনামূলক মন্তব্য উঠে এসেছে।

বক্তারা বলেন, জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য পুলিশের কাঠামোগত সংস্কার ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।

রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস অডিটোরিয়ামে ‘নাগরিক ভাবনায় জনতার পুলিশ, নিরাপত্তা ও আস্থার বন্ধন’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করা হয়।

এতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সাবেক আইজিপি, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী,  শিক্ষাবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

সভায় প্রধান আলোচক অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, “পুলিশ আইন ১৮৬১ এবং সংশ্লিষ্ট বিধিমালায় বহু ত্রুটি রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি গঠিত পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে এসবের গভীরে যাওয়া হয়নি।”

তিনি আরও বলেন, “পুলিশ-জনগণের মধ্যকার দূরত্ব কমাতে হলে বাহ্যিক নয়, অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করতে হবে।”

সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, “প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ এসেছে, সেগুলো সাতদিনে তৈরি করা সম্ভব। বাস্তবভিত্তিক ও সময়োপযোগী নয় এমন সুপারিশ দিয়ে সংস্কারের নামে প্রহসন করা ঠিক নয়।”

তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যদি কেবল পরীক্ষা-নিরীক্ষাই করতে হয়, তাহলে কমিশনের প্রয়োজন কী?”

সভাপতির বক্তব্যে বর্তমান আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, “জনগণের আস্থা তখনই অর্জন করা সম্ভব। যখন তারা দেখবে পুলিশ আইন প্রয়োগের পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধ ও অধিকার রক্ষায় কাজ করছে।”

নিউএজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীর বলেন, “রাষ্ট্র যখন নিপীড়ক হয়ে ওঠে, তখন পুলিশ জনগণের বাহিনী হয়ে উঠতে পারে না।

অতীতে বিরোধী দল দমনে পুলিশকে পুরস্কৃত করা হয়েছে, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক।” তিনি বলেন, “জনতার পুলিশ হতে হলে বুদ্ধিমত্তা ও বিবেকের সমন্বয় থাকতে হবে।”

অন্যান্য আলোচকদের মধ্যে অধ্যাপক সাজ্জাদ সিদ্দিকী বলেন, “পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের সংস্কৃতি বাদ না দিলে কোনো সংস্কারই কার্যকর হবে না।”

পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য অধ্যাপক চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস বলেন, “নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশে পুলিশ যদি সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থাকে, তবে মানুষের আস্থা ফিরে আসবে। তাদের মানবিক ভূমিকা বাড়ানো জরুরি।”

শিল্পোদ্যোক্তা সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, “পুলিশের দক্ষতা বাড়াতে হবে এবং পেশাদারভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। নিয়োগে সেবামূলক মানসিকতা যাচাইয়ের প্রয়োজন রয়েছে।”

জাহেদ উর রহমান বলেন, “হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন কার্যকর করার কথা থাকলেও পুলিশই তা বাতিলের দাবি করেছিল। শেষ পর্যন্ত আইনটি বহাল থাকলেও কিছু শর্ত আরোপের কথা ওঠে।”

সাবেক আইজিপি আবদুল কাইয়ুম বলেন, “আমরা স্বাধীনতা চাই। কিন্তু ক্ষমতার সামনে গোলামির প্রবণতা থেকেই যায়। পদোন্নতির আশায় রাজনৈতিক আনুগত্যের চর্চা আমাদের সংস্কারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।”

সভায় বিশেষ অতিথি পুলিশের অতিরিক্ত আইজি ও উপকমিটির সভাপতি গোলাম রসুল বলেন, “জনগণ পেশাদার, নিরপেক্ষ ও আস্থাভাজন পুলিশ চায়। কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্ব এখনো সেই পরিবর্তনের পক্ষে নেই।

১৯৩০ সাল থেকে পুলিশকে দমনমূলক যন্ত্র হিসেবে ব্যবহারের যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তা বদলানোর এখনই সময়।”

সভায় উপস্থিত ছিলেন সব মহানগর পুলিশের কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপাররাও। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা একবাক্যে বলেন, পুলিশ সংস্কারে রাজনৈতিক সদিচ্ছাই হতে পারে সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *